অঙ্গীকারনামা বা চুক্তিপত্র একই অর্থ বহন করে। চুক্তিপত্র বা অঙ্গীকারনামা করার আগে চুক্তিপত্র বা অঙ্গীকারনামা কি জানা জরুরি। না জেনে না বুঝে কোন কিছু করা ঠিক নয়। অঙ্গীকারনামা লেখার আগে জেনে নেওয়া যাক যে, চুক্তিপত্র বা অঙ্গীকারনামা কি?
অঙ্গীকারনামা
দুটি শব্দ, এক সাথে মিলে অঙ্গীকারনামা হয়েছে। যেমম অঙ্গীকার-নামা। অঙ্গীকার অর্থ প্রতিজ্ঞা, বাক্যদান, স্বীকার। এবং নামা অর্থ: পত্রলিখন
(ওকালতনামা), প্রমাণপত্র, দলিল (চুক্তিনামা), বিবরণ ইত্যাদি।
ongikarnama/ অঙ্গীকারনামা বা চুক্তিপত্র কাকে বলে? এককথায়ঃ প্রতিজ্ঞা বা স্বীকার উক্তি লেখিতভাবে প্রকাশ করাকে অঙ্গীকারনামা বা চুক্তিপত্র বলে।
cukti potro lekhar niom |
চুক্তিপত্রের নিয়ম
১. চুক্তিতে যে দুই পক্ষ অংশগ্রহণ করবে সে দুই পক্ষের নাম, ঠিকানা স্পষ্ট করে উল্লেখ করতে হবে। আর যদি কোনো ব্যবাসায়িক ক্ষেত্রে হয় তাহলে ওই ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের নাম, ঠিকানা, অংশীদারত্বের বিবরণ, সঙ্গে বাকিসব তথ্য উল্লেখ করতে হবে। এমন ভাবে সব তথ্য যুক্ত করতে হবে চুক্তিপত্রে যাতে সহজেই বোঝা যায়। মোটকথা সহজবোধ্য করতে হবে।
২. চুক্তিপত্রের দ্বারা যে দুই পক্ষের সাথে চুক্তি সম্পাদিত হবে, ওই চুক্তি অনুসারে কার কতটুকু অংশ বা ভূমিকা পালন করার গ্রাউন্ড থাকবে, কোন বিষয় নিয়ে কিংবা কি কাজ নিয়ে চুক্তি হচ্ছে ওই সকল বিষয় উল্লেখ করে চুক্তির শুরুর দিকে তারিখ থাকতে হবে। তারিখ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে এই চুক্তির ক্ষেত্রে আর যদি চুক্তি নির্দিষ্ট সময়ের জন্যে হয়ে থাকে সে ক্ষেত্রে কবে চুক্তি শুরু হচ্ছে আর কবে চুক্তি শেষ হচ্ছে তার তারিখ অবশ্যই উল্লেখ করে দিতে হবে। নাহলে পরবর্তীতে এই ব্যাপার নিয়ে ঝামেলা হওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে।
৩. অংশীদারী ভিত্তিতে পূঁজি খাটালে চুক্তিপত্রে চুক্তির সময়ে অংশীদারদের পুঁজি কত, কোন পক্ষ কত অংশ পুঁজি দিয়েছে, কি নিয়মে লাভের অংশ আদায় হবে, ব্যবসার ব্যবস্থাপনা কেমন হবে প্রভৃতি বিষয় অবশ্যই উল্লেখ থাকতে হবে। কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত সমস্যা দেখা দিলে সে সমস্যা কিভাবে নিষ্পত্তি করা হবে সে বিষয়ে চুক্তিতে উল্লেখ করে দিতে হবে। বিশেষ করে বিরোধ হলে আলোচনা কিংবা সালিশের মাধ্যমে তা নিষ্পত্তি করার সুযোগ থাকবে নাকি থাকবে না, তার উল্লেখ অবশ্যই থাকা দরকার।
৪. বর্তমানে সব ক্ষেত্রেই মীমাংসার মাধ্যমে যেকোন বিরোধ নিষ্পত্তি করা হয়। কিংবা অন্তত সে বিষয়ে সবার একটা ইতিবাচক ধ্যান ধারণা কাজ করে। তাই চুক্তিপত্রের একটি অনুচ্ছেদে এ সংক্রান্ত শর্ত রাখা খুবই জরুরি। চুক্তিনামায় সালিশ আইন ২০০১-এর মাধ্যমে নিষ্পত্তির বিধানটি রাখা যেতে পারে।
৫. যে দুই পক্ষ চুক্তিতে আবদ্ধ হবে, চুক্তির শেষে সেই দুই পক্ষের স্বাক্ষর ও সাক্ষীদের স্বাক্ষর নিতে হবে।
৬. চুক্তি করার সময় এবং চুক্তি পত্র যে দুই পক্ষকে নিয়ে লিখিত হবে তাদের মধ্যকার কেউ নাবালক, পাগল, দেউলিয়া ব্যক্তি, সরকারি কর্মচারী, রাষ্ট্রপতি, মন্ত্রী, বিদেশি রাষ্ট্রদূত, বিদেশি শত্রু ও দেশদ্রোহী ব্যক্তি প্রমাণিত হলে সেই চুক্তি সম্পাদিত হবে না এবং সে ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৭. অংশীদারী চুক্তির ক্ষেত্রে ঠিক মতো সব কিছুই আগের নিয়ম মতোই হবে।
ব্যবসার চুক্তি কিভাবে করতে হয় চুক্তিপত্র নমুনা নিন্মে দেওয়া হল। নিন্মের চুক্তি নমুনায় দেওয়া শর্ত সমুহ কম বেশী নিজের মত হালনাগাত করে কাগজ বা স্ট্যাম্পে প্রিন্ট করে ব্যাবহার করতে পারবেন।
chuktipotro lekhar niom
অংশীদারী চুক্তিপত্র দলিল।
অত্র চুক্তি নামা দলিল অদ্য ০১/০১/২০২৩ ইং তারিখে নিম্ন লিখিত পক্ষদ্বয়ের মধ্যে সম্পাদিত হইল।
নামঃ জন্মতারিখ---, পিতা---- ----, ঠিকানা------------- জাতীয়তা-বাংলাদেশী, ধর্ম-ইসলাম, পেশা-ব্যবসা।—— ১ম পক্ষ।
নামঃ জন্মতারিখ---, পিতা---- ----, ঠিকানা------------- জাতীয়তা-বাংলাদেশী, ধর্ম-ইসলাম, পেশা-ব্যবসা।—— ২য় পক্ষ।
পরম করুণাময় মহান আল্লাহ তায়ালার নাম স্মরণ করিয়া অত্র অংশীদারী চুক্তিপত্র দলিলের আইনানুগ বয়ান আরম্ভ করিতেছি। যেহেতু আমরা সকল পক্ষগণ পরস্পর পরস্পরকে দীর্ঘ দিন যাবত চিনি ও জানি। এমতাবস্থায় আমরা সকল পক্ষগণ একত্রে ব্যবসা পরিচালনা করার ইচ্ছা প্রকাশ করায় আমরা উপরোক্ত পক্ষদ্বয় একমত হইয়া আলাপ আলোচনার মাধ্যমে ভবিষ্যৎ জটিলতা নিরসনকল্পে অদ্য হাজিরান মজলিশে স্বাক্ষীগণের মোকাবেলায় এই মর্মে গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে নিম্ন লিখিত শর্তাবলীর উপর আস্থা রাখিয়া ভবিষ্যৎ জটিলতা নিরসনকল্পে অত্র ব্যবসায়িক চুক্তিপত্র দলিলে আমরা ১ম ও ২য় পক্ষদ্বয় অত্র ব্যবসায়িক চুক্তিপত্র দলিলে আবদ্ধ হইলাম।
পাতা/২
শর্তবলীঃ-
১। তাসফিয়া ও রাফিদ ষ্টেশনারী এন্ড খেলাঘর ব্যবসা যৌথভাবে পরিচালিক হইবে।
২। অত্র দলিল সহি সম্পাদনার তারিখ হইতে অত্র অংশীদারী ব্যবসার মেয়াদ শুরু হইবে এবং আইনানুগ রুপে অবসান না হওয়া পর্যন্ত অত্র ব্যবসা চলিবে।
৩। ব্যবসার অফিস স্থান ঢাকা অবস্থিত। এবং ব্যবসার মূল অফিস ঢাকা শহরের অবস্থিত থাকিবে, যাহার ------------জেলা-ঢাকা এবং অন্যান্য স্থানে উভয় পক্ষের লিখিত অনুমোদন লইয়া শাখা অফিস খোলা যাইবে।
৪। (ক) ব্যবসার অংশীদারগণের পুঁজি ১০,০০,০০০/- (দশ লক্ষ) টাকা তন্মধ্যে ১ম পক্ষ ৬০% এবং ২য় পক্ষ ৪০% ভাগে বিয়োগ করিবে এবং অংশীদারদের মালিকানার অংশ ১ম পক্ষ ৬০% এবং ২য় পক্ষ ৪০% ভাগে থাকিবে।(খ) ব্যবসার এককালীন পুঁজি ছাড়াও যে কোন সময় ব্যবসার উন্নতির জন্য পুঁজির পরিমাণ হ্রাস বৃদ্ধি করিতে পারিবেন।
পাতা/৩
৫। আর অংশীদারী ব্যবসার লাভ ক্ষতির অংশ ১ম পক্ষ ৬০% এবং ২য় পক্ষ ৪০% ভাগে বন্টন করা হইবে। উল্লেখ থাকে যে, ১ বা ২ পক্ষ যে পরিমান পুজি দেবে। শত করা হারে সেই পরিমান লাভ ক্ষতির হিসাব করা হবে।
৬। প্রত্যেক (১) মাসে অন্তর অন্তর অত্র ব্যবসার আয় ব্যয়, লাভ ক্ষতির হিসাব প্রস্তুুত করা হইবে অংশ ১ম পক্ষ ৬০% এবং ২য় পক্ষ ৪০% ভাগে হিস্যা পক্ষগণের উপর ন্যস্ত হইবে তবে প্রতি মাসে লাভের শতকরা অংশ ১ম পক্ষ ৬০% এবং ২য় পক্ষ ৪০% ভাগে অত্র ব্যবসা রির্জাভ ফান্ডে জমা থাকিবে।
৭। আনুপাতিক ভিত্তিতে উভয় পক্ষ ব্যবসা সংক্রান্ত দায়দায়িত্ব পালন করিবে, তবে উভয় পক্ষের সর্বসম্মতিক্রমে জনাব ------- ব্যবস্থাপনা অংশীদার হিসাবে দায়িত্ব পালন করিবেন। তিনি সভায় সভাপতিত্ত্ব করবেন এবং তাঁর স্বাক্ষরে ব্যাংক বিসিকসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে চিঠিপত্র এবং প্রয়োজনীয় অন্যান্য কাগজে ব্যবস্থাপনা অংশীদার জনাব ------কে বিসিক ঢাকা (কেরাণীগঞ্জ) শিল্প নগরীতে প্লট ক্রয় বিক্রয়ের সর্বময় ক্ষমতা দেয়া হলো এবং তাকে দলিল সম্পাদনের ক্ষমতা দেয়অ হইল। অথবা উভয় পক্ষের মনোনীত এক জন সহকারী পরিচালক রাখা যেতেপারে।
৮। এই চুক্তিনামায় যে কোন পরিবর্তন, পরিবর্ধন করিবার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে উভয় পক্ষের সর্বসম্মতিক্রমে উহা সম্পন্ন হইবে।
৯। কেবলমাত্র উভয় পক্ষের সম্মতিতে এই চুক্তিনামা বাতিল বা ব্যবসা বন্ধ ঘোষনা করা যাইবে।
পাতা/৪
১০। ব্যবসা চলাকালিন সময়ে আল্লাহ না করুন যদি কোন পক্ষের কেউ মৃত্যুবরন করেন তাহা হইলে মৃত্যুব্যক্তির উত্তরাধিকারীগণ মৃত্যুবরনকারী অংশীদারের অংশ ভোগ করিবেন এবং ঐ অংশের অংশীদার হিসাবে গন্য হইবেন ও সকল প্রকার দায়দায়িত্ব পালন করিবেন।
১১। উভয়পক্ষের কেহ যদি ব্যবসা চলাকালীন সময়ে কোন কারণে স্ব-ইচ্ছায় অবসর নিতে ইচ্ছা প্রকাশ করেন তবে তাহাকে অন্ততপক্ষে তিন মাস পূর্বে অপর পক্ষকে নোটিশ প্রদান করিতে হইবে। কোন পক্ষ যদি তাহার নিজ অংশ হস্তান্তর করিতে চাহেন তবে অবশ্যই নিজেদের মধ্যে আলোচনা করিয়া সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিতে হইবে, এক পক্ষ ক্রয় করিতে না চাহিলে সমঝোতার ভিত্তিতে বাহিরের কারো কাছে বিক্রয় করিতে পারিবেন। উল্লেখ থাকে যে, কোন অংশীদার নিতে চাইলে বাহিরের কারো কাছে হস্তান্তর বা মালিকানা পরিবর্তন করিতে পারবে না।
১২। যদি কোন কারণে ব্যবসায়িক বিষয় লইয়া উভয় পক্ষের মধ্যে কোন মতবিরোধের সৃষ্টি হয় তাহা হইলে বিরোধীয় পরস্পর আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে মিটমাট করিবেন অথবা উভয় পক্ষের নির্ধারিত/নির্বাহিত একজন এবং উভয় পক্ষের সমন্বয়ে শালিস পরিষদ গঠন করিয়া উক্ত শালিস পরিষদের মাধ্যমে বিষয়টি মিটমাট করিবেন।
১৩। অত্র চুক্তির কার্যকারীতা শুধুমাত্র উল্লেখিত ব্যবসায় ক্ষেত্রে কার্যকরী হইবে।
পাতা/৫
এতদ্বার্থে স্বেচ্ছায় স্বজ্ঞানে ,সুস্থ শরীরে অন্যের বিনা প্ররোচনায় আমার উল্লেখিত পক্ষগন নিম্মে উল্লেখিত স্বাক্ষীগণের সম্মুখে নিজ নিজ স্বাক্ষর করিয়া অত্র অংশীদারী দলিল সম্পাতদন করিলাম ।
অত্র দলিল ০৫ (পাঁচ) পাতায় কম্পোজকৃত এবং স্বাক্ষী ( ০৩ ) জন বটে।
স্বাক্ষীগণের স্বাক্ষর ও ঠিকানাঃ
১।
২।
৩।
—————–১ম পক্ষের স্বাক্ষর
—————–২য় পক্ষের স্বাক্ষর