ধর্ষণঃ একজন ব্যক্তির অনুমতি ব্যতিরেকে তার সঙ্গে যৌনসঙ্গম বা অন্য কোনো ধরনের যৌন অনুপ্রবেশ ঘটানোকে ধর্ষণ বলা হয়।
এখন আসি মূল আলোচনায়। বাংলাদেশে ধর্ষণের ঘটনা যে পরিমাণ বাড়ছে বর্তমানে মানুষ নরপিশাচ হয়ে যাচ্ছে। ধর্ষণের কারণ খুজতে গিয়ে নানান মানুষ নানান মত প্রকাশ করে যাচ্ছে । এদিকে আমরা ধর্ষক ও ধর্ষিতা খবর প্রতিদিন শুনে যাই শুধু শুনে যাই। শিশু ধর্ষণের খবর, মা মেয়ে বোন এবং কি বৃদ্ধা ধর্ষণের খবর। ( হে নারী, কেউ যদি তোমাকে ধর্ষণ করতে আসে, তুমিও তাকে ধর্ষণ করে দাও। পুরুষদের দেখিয়ে দাও, ধর্ষণ শুধু তারা নয়, তোমরাও পারো। - তসলিমা নাসরিন)
আজ সারাবাংলার জনগণ ধর্ষকের ফাঁসির দাবিতে মুহুর্মুহু স্লোগান দিচ্ছে। ধর্ষণের বিরুদ্ধে স্লোগানে প্রকম্পিত ক্যাম্পাস। ধর্ষণের বিরুদ্ধে রাজু ভাস্কর্য, শাহবাগে এলাকায় মানববন্ধন।
সংবিধানের যে ধারায় ধর্ষণ নিয়ে বলা হয়েছে
বাংলাদেশের সংবিধানে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০, এর ৯ ধারায় ধর্ষণ এবং ধর্ষণ জনিত কারণে মৃত্যু ঘটানো ইত্যাদির সাজা সম্পর্কে আলচনা করা হয়েছে। অত্র ধারায় একজন অপরাধীর সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ডর বিধান রাখা হয়েছে।
বাংলাদেশ সংবিধানে ধর্ষণের সংজ্ঞা
যদি কোন পুরুষ বিবাহ বন্ধন ব্যতীত ষোল বৎসরের অধিক বয়সের কোন নারীর সাথে তার সম্মতি ছাড়া বা ভীতি প্রদর্শন বা প্রতারণামূলকভাবে তার সম্মতি আদায় করে, অথবা ষোল বৎসরের কম বয়সের কোন নারীর সাথে তার সম্মতিসহ বা সম্মতি ব্যতিরেকে যৌন সঙ্গম করেন, তাহলে তিনি উক্ত নারীকে ধর্ষণ করেছেন বলে গণ্য হবেন।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০, এর ৯ ধারা মতে সাজাসমুহঃ
৯(১) যদি কোন পুরুষ কোন নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করেন, তাহলে তিনি যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং এর অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবেন।
(২) যদি কোন ব্যক্তি কর্তৃক ধর্ষণ বা উক্ত ধর্ষণ পরবর্তী তার অন্যবিধ কার্যকলাপের ফলে ধর্ষিতা নারী বা শিশুর মৃত্যু ঘটে, তা হলে উক্ত ব্যক্তি মৃত্যুদণ্ডে বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং এর অতিরিক্ত অন্যুন এক লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবেন।
(৩) যদি একাধিক ব্যক্তি দলবদ্ধভাবে কোন নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করেন এবং ধর্ষণের ফলে উক্ত নারী বা শিশুর মৃত্যু ঘটে বা তিনি আহত হন, তা হলে ঐ দলের প্রত্যেক ব্যক্তি মৃত্যুদণ্ডে বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং এর অতিরিক্ত অন্যুন এক লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবেন।
(৪) যদি কোন ব্যক্তি কোন নারী বা শিশুকে-
(ক) ধর্ষণ করে মৃত্যু ঘটানোর বা আহত করার চেষ্টা করেন, তাহলে উক্ত ব্যক্তি যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন এবং এর অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবেন;
(খ) ধর্ষণের চেষ্টা করেন, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তি অনধিক দশ বত্সর কিন্তু অন্যুন পাঁচ বত্সর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং এর অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবেন।
(৫) যদি পুলিশ হেফাজতে থাকাকালীন সময়ে কোন নারী ধর্ষিতা হন, তা হলে যাহাদের হেফাজতে থাকাকালীন উক্তরূপ ধর্ষণ সংঘটিত হয়েছে, সেই ব্যক্তি বা ব্যক্তিগণ ধর্ষিতা নারীর হেফাজতের জন্য সরাসরিভাবে দায়ী ছিলেন, তিনি বা তারা প্রত্যেকে, ভিন্নরূপ প্রমাণিত না হলে, হেফাজতের ব্যর্থতার জন্য, অনধিক দশ বত্সর কিন্তু অন্যুন পাঁচ বত্সর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং এর অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবেন।
ইসলাম- ধর্ষণ ও ব্যভিচার সুস্পষ্ট হারামঃ
শিরক ও হত্যার পর ব্যভিচার সুস্পষ্ট হারাম ও বড় ধরনের অপরাধ। কোরআনে কারিমে বলা হয়েছে, ‘ব্যভিচারের কাছেও যেও না। নিশ্চয় এটা অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ।’ (সুরা আল ইসরা, আয়াত : ৩২)
প্রখ্যাত তাফসিরবিশারদ ইমাম কুরতুবি (রহ.) বলেন, “উলামায়ে কেরাম বলেছেন, ‘ব্যভিচার করো না’-এর চেয়ে ‘ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না’ এটি অনেক বেশি কঠোর কথা।” এর সহজ অর্থ হলো, যেসব বিষয় ব্যভিচারে উদ্বুদ্ধ করে ও ভূমিকা রাখে সেগুলোও হারাম। ধর্ষণের শাস্তি সম্পর্কে ইসলাম যা বলে-