চাচি। আপন নয় কিন্তু আপন চেয়ে কম নয়। আপন চাচি থেকেও নেই। মানুষ কথায় বলে, আপন থেকে পর ভালো।দুঃখ ভরা জীবন যাইহোক ঐ কথা অন্য একদিন বলবো। আব্বার চাচাত ভাইয়ের বৌ এর কথা বলি। আব্বার চাচাত ভাইয়ের বৌ ঐ সুবাদে চাচি। বয়স ৪৫ হবে। চাচা জীবিত নেই, অকাল মৃত্যুর বরণ করেছে। চাচির কপাল খারাপ। আল্লাহ চাচাকে ৫০ বছর বয়সে পৃথিবী থেকে তুলে নিয়েছে। হে আল্লাহ চাচাকে বেহেস্ত দান করুন। তার ২ ছেলে, ২ মেয়ে। বড় ছেলে নিজ গ্রাম থেকে পছন্দ করে পড়িবারের সম্মতিক্রমে বিয়ে করেছে প্রায় ১০ বছর। প্রবাসে থাকে দুই এক বছর পর পর বাড়িতে আসে। দুঃখের বিষয় তার কোন সন্তান হচ্ছে না। আল্লাহর লিলা খেলা বোঝা বড় দায়। দোয়া করি চাচাতো ভাইকে আল্লাহ যেন নেককার সন্তান দান করেন। ছোট ছেলে বিয়ে করে নাই, প্রবাসে থাকে। তার কপাল খারাপ বাবা জীবিত থাকা অবস্তায় বিবাহ করার সুযোগ পেলো না। বয়স কম ছিল। এখন বড় হয়েছে, বিদেশ থেকে বাড়িতে আসলে বিয়ে করাবে। এই নিয়ে পড়িবারের চিন্তাধারা। চাচার ২ মেয়ের বিয়ে দিয়েছে। তারা স্বামীর বাড়িতে সুখে আছে। সবাই সুখে থাকুক এই কামন করি। আসল কথা হল, চাচিকে নিয়ে লেখতেছি। তাই আর কথা না বাড়িয়ে চাচির কথা বলি--
চাচা হারা চাচি এখন বড় একলা। বাড়িতে তেমন ঝামেলা নেই। বড় ছেলের বৌ নিয়ে টুংটাং করে দিন চলে যাচ্ছে। তারপরেও যার স্বামী নেই সেই বলতে পারে কত কষ্টে জীবনযাপন করতে হয়। হে আল্লাহ চাচির প্রতি সহায় হোন। চাচি এখন অসুস্থ। অনেক দিন ধরে পেটে ব্যাথা। পল্লী ডাক্তার থেকে ওষুধ খেয়ে যাচ্ছেই তো যাচ্ছে কিন্তু পেটে ব্যাথা তেমন কমে না। গ্রামের মানুষ কবিরাজি চিকিৎসার বক্ত তাই সকাল বিকাল কবিরাজি চিকিৎসা করে যাচ্ছে। তার কোন ফল পাওয়া যাচ্ছে না। এভাবে অনেক টাকা খরচ করেছে। কবিরাজ ও পল্লী ডাক্তার কেউ পেটে ব্যাথার কারন কি? আবিষ্কার করতে পারে নাই। দিন দিন পেটে ব্যাথা বেশী অনুভব করে যাচ্ছে। চাচি গোপনে নিরবে বসে-বসে কেঁদে যাচ্ছে।চোখ ফোলা, চোখের কোনায় রক্ত জমা, চোখের নিচে কালো দাগ এবং মলিন চেহারা দেখলে বুঝা যায় চাচির অন্তরের কি অবস্থা। চাচির এই অবস্থা দেখে চাচার কথা মনে পড়ে, কেন আল্লাহ চাচাকে নিয়ে গেল।(হে আল্লাহ তুমি আমাদের মাফ করে দাও)। চাচার বিরহে চাচি কাঁদে সবাই এই কথা অবুভব করে কিন্তু চাচির মূল কষ্ট কেউ বুঝতেছে না। জীবনের বাস্তবতা অনেক কঠিন।
একদিন সকালে চাচি হাউ মাউ করে কেঁদে- কেঁদে বলে যাচ্ছে, আমারে ভালো কোন ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাও পেটে ব্যাথা, পেটে ব্যাথায় মরে যাচ্ছি।(ও আল্লাহ আমার চাচির পেটে ব্যাথার ভালো করে দিন।) কান্না শুনে বাড়ির লোক দলে দলে দেখতে আসতেছে। এক এক জনের মুখের বানী এক এক রকম। কি আর বলবো উপদেশর বানী আর প্রেসক্রিপশন। এই দিকে চাচি কেঁদে যাচ্ছে। সবাই হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলে, কে নিয়ে যাবে আর কেউ সামনে আসতেছে না। দেখুন এইবার কষ্ট, স্বামী হারা রমণীর কি করুন যন্ত্রনা। ২ ছেলে ২ মেয়ে এক ছেলের বৌ কেউ এখন পাশে নেই। পাঠক হয়ে আপনি বুঝেন নিন। সুখের সংসার কাকে বলে! টাকা দিয়ে কি সব হয়? সুখের আশায় ছেলেদের বিদেশ পাঠাল। এই দিকে হাউ মাউ করে চাচি কেঁদে যাচ্ছে। এরি নাম সুখ?
চাচির কান্না দেখে, চাচির ভাইয়ের বৌ। ২ বাচ্চার মা। গ্রামের হাসপাতাল (ক্লিনিক) নিয়ে গেল। পল্লী হাসপাতাল ডাক্তারের অভাব, ভালো চিকিৎসা নেই। যাইহোক প্রাথমিক চিকিৎসা পাবে। তারপরেও হাসপাতাল (ক্লিনিক) সামর্থ্য অনুযায় সেবা দিয়েছে কিন্তু চাচির পেটের ব্যাথা কমে না। চাচির ভাইয়ের বৌ এর সংসার দিন এনে দিনে খায়। সে কি করবে আরো উন্নত চিকিৎসার জন্য শহরে বড় হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।চিন্তার বিষয় , সবচেয়ে বড় কথা সেই একলা মহিলা মানুষ। চিন্তাভাবনা করে বাড়িতে নিয়ে আসলো। এইদিকে চাচির কান্না কে দেখে। যার ব্যাথা সেই বুঝে।--
দিন যায় রাত হয় এ দুনিয়ার নিয়ম। এর মাঝে চাচির পেটের ব্যাথা দিন দিন বেড়েই চলেছে। পেটের ব্যাথার সমাধান জানা নেই।উন্নত চিকিৎসার জন্য শহরে বড় হাসপাতালে নিয়ে গেলো চাচির ভাইয়ের বৌ ও বড় মেয়ে তার সাথে ছোট দেবর। একটি প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করল। চাচির পেটের ব্যাথা, চাচির কান্না দেখে। ডাক্তার আসলো পরীক্ষা নিরীক্ষা করে আলট্রাসনোগ্রাফি সহ প্রায় ১০-১১ ধরনের টেস্ট দিল। সব রিপোর্ট পেতে ২ দিন সময় লাগবে। রিপোর্ট বিহীন প্রাথমিক চিকিৎসা চলতেছে।
২ দিন বাদে। সব রিপোর্ট হাতে পেলো। ডাক্তার আসলো পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখল। ডাক্তার বলতেছে চাচির পেটে টিউমার। পেট ব্যাথার কারন আবিষ্কার হল। পেট ব্যাথার কারন ও প্রতিকার এর জন্য অপারেশন করতে হবে।