ঈদের নামাজ বছরে পড়তে হয় মাত্র দুইবার, ফলে অনেকেই এর নিয়মকানুন একটু গুলিয়ে ফেলেন। অনেকেই কখন হাত বাঁধবেন, কখন হাত না বেঁধে ছেড়ে দেবেন এটা নিয়ে খুব চিন্তিত থাকেন, এমনকি অনেকে একবার ডানপাশের লোকেরটা অনুসরণ করেন আরেকবার বামপাশের লোকেরটা অনুসরণ করেন। অথচ বিষয়টা খুবই সহজ। । মূলত বিব্রত হতে হয় অতিরিক্ত ৬টি তাকবীর নিয়ে। নীচে ঈদের নামাজের সংক্ষিপ্ত নিয়ম দেওয়া হইলো।
নামাজের নিয়মঃ
মুক্তাদীর জন্যে ঈদ-উল-আজহার নামাজের নিয়তঃ (বাংলায়) :
আমি ঈদুল আজহার দুই রাকাআত ওয়াজিব নামায ছয় তাকবিরের সহিত এই ইমামের পিছনে কিবলামূখী হয়ে আল্লাহর ওয়াস্তে আদায় করছি, ”
এ নিয়ত মনে মনে স্থির করা অথবা মুখে বলা। তারপর তাকবিরে তাহরিমা ‘আল্লাহু আকবার’ বলে হাত বাঁধা এবং ছানা পাঠ করা।
ছানা পাঠ করার পর ইমাম অতিরিক্ত ৩টি তাকবির দিবেন। এ তিন তাকবিরের সময় ইমাম ও মুক্তাদি উভয়হাত কান পর্যন্ত হাত উঠাবেন এবং প্রথম ও দ্বিতীয় তাকবিরে হাত কান পর্যন্ত ওঠানো পর নিচে ছেড়ে দিবেন। তৃতীয় তাকবিরের সময় কাঁধ পর্যন্ত হাত উঠিয়ে হাত ছেড়ে না দিয়ে হাত বাঁধবেন। এর পর ইমাম সূরা ফাতিহা ও কিরাআত সমাপ্ত করে যথারীতি রুকু ও সিজদা করার মাধ্যমে প্রথম রাকাআত শেষ করে পুনরায় দাঁড়িয়ে দ্বিতীয় রাকাআতের কিরাত শেষ করবেন।
অতঃপর রুকুতে যাবার পূর্বে আবার অতিরিক্ত ৩টি তাকবির দিবেন এভাবে যে, কান পর্যন্ত হাত উঠিয়ে তাকবির বলে হাত ছেড়ে দিবেন। অতঃপর চতুর্থ তাকবির তথা রুকুর তাকবির বলে রুকুতে চলে যাবেন। এর পর অবশিষ্ট নামাজ যথারীতি আদায় করে ছালাম ফিরাবেন। তারপর ইমাম সাহেব মিম্বরে ওঠে দুটি খুৎবাহ পড়বেন।
মনে রাখার বিষয় হলো:
১. যে তাকবিরের পরে সূরা/ছানা পড়তে হয় সেই তাকবিরের পর হাত বাঁধতে হয়।
২. যে তাকবিরের পরে সূরা/ছানা পড়তে হয় না, সেই তাকবিরের পর হাত বাঁধতে হয় না।
এই দুইটা বিষয় মনে রাখলে হাত বাঁধা বা ছাড়া নিয়ে কোন সমস্যা আর থাকবে না। আসুন একটু বিস্তারিতভাবে দেখি:
সাধারণ নামায | ঈদের নামায | |
১ম রাকাত -> | তাকবিরে তাহরিমা (১ম তাকবির) | তাকবিরে তাহরিমা (১ম তাকবির) |
হাত বাঁধা | হাত বাঁধা (কারণ এর পর ছানা পড়তে হবে) | |
ছানা পড়া | ছানা পড়া | |
১ম অতিরিক্ত তাকবির দেওয়া | ||
হাত ছেড়ে দেওয়া (কেননা এরপরে তো আর কোন সূরা পড়া হচ্ছে না) | ||
২য় অতিরিক্ত তাকবির দেওয়া | ||
হাত ছেড়ে দেওয়া (কেননা এরপরে তো আর কোন সূরা পড়া হচ্ছে না) | ||
৩য় অতিরিক্ত তাকবির দেওয়া | ||
হাত বেঁধে ফেলা (কারণ এর পর সূরা পড়া হবে) | ||
সূরা ফাতিহা + অন্য সূরা মিলানো | সূরা ফাতিহা + অন্য সূরা মিলানো | |
তাকবির দেওয়া | তাকবির দেওয়া | |
রুকু করা | রুকু করা | |
রুকু থেকে দাঁড়ানো | রুকু থেকে দাঁড়ানো | |
সিজদায় যাওয়া | সিজদায় যাওয়া | |
২টি সিজদা করা | ২টি সিজদা করা | |
তাকবির দেওয়া (২য় রাকাতের জন্য) | তাকবির দেওয়া (২য় রাকাতের জন্য) | |
২য় রাকাত -> | হাত বেঁধে দাঁড়ানো | হাত বেঁধে দাঁড়ানো |
সূরা ফাতিহা + অন্য সূরা মিলানো | সূরা ফাতিহা + অন্য সূরা মিলানো | |
৪র্থ অতিরিক্ত তাকবির দেওয়া | ||
হাত ছেড়ে দেওয়া (কেননা এরপরে তো আর কোন সূরা পড়া হচ্ছে না) | ||
৫ম অতিরিক্ত তাকবির দেওয়া | ||
হাত ছেড়ে দেওয়া (কেননা এরপরে তো আর কোন সূরা পড়া হচ্ছে না) | ||
৬ষ্ঠ অতিরিক্ত তাকবির দেওয়া | ||
হাত না বাঁধা (কেননা এরপরে তো আর কোন সূরা পড়া হচ্ছে না, রুকুতে যেতে হচ্ছে) | ||
রুকু করা | রুকু করা | |
রুকু থেকে দাঁড়ানো | রুকু থেকে দাঁড়ানো | |
সিজদায় যাওয়া | সিজদায় যাওয়া | |
২টি সিজদা করা | ২টি সিজদা করা | |
শেষ বৈঠক + সালাম ফিরানো | শেষ বৈঠক + সালাম ফিরানো |
তাকবিরে তাশরিক পড়তে পড়তে ঈদগাহে যেতে হবে। ইমামের সহিত যথাযথভাবে ঈদের নামাজ আদায় করতে হবে। ঈদের গুরুত্বপূর্ণ ফজিলত ও বরকত লাভের জন্য আল্লাহ তাআলার কাছে প্রাথনা করতে হবে। আল্লাহ তাআলা যথা নিয়মে ঈদের নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
পরিশেষে…
আল্লাহ তাআলার দরবারে প্রার্থণা আল্লাহ যেন সব মুসলিমকে উপরোক্ত বিষয়গুলো জেনে আমল করার তাওফিক দান করেন। এ ভালো আমলগুলোর বরকত আমাদের দান করেন। আমিন।
সংগৃহীতঃ লিংক সুত্র
১। bdbondhu.com-আগেই জেনে নিন ঈদ-উল-আজহার নামাজের নিয়ম
২। shodalap.org-মনে রাখার বিষয়