হাই ব্লাড প্রেসার : কেন হয়, হলে কী করবেন।
ব্লাড প্রেসার (Blood pressure) নামে অতিপরিচিত রোগটির নাম ডাক্তারি ভাষায় হাইপারটেনশন বলা হয় । রক্ত চাপ যখন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয়, তখন উচ্চ রক্তচাপ হয়। এই চাপ এর একটি স্বাভাবিক মাত্রা আছে আর যখন তা স্বাভাবিক মাত্রা ছাড়িয়ে যায় তখনি তাকে বলা হয় হাইপারটেনশন (Hypertension) বা উচ্চ রক্তচাপ। আর বেশী করে বলতে গেলে, মস্তিস্ক মেরুজল হৃৎপিণ্ডের তৃতীয় অংশ থেকে ওপরে উঠে স্নায়ুতন্ত্রে প্রবেশ করে। যখন মস্তিষ্ক মেরুজলে লবণের পরিমাণ বেড়ে যায়, তখন বহির্গত নালির বাল্বের ভেতরে অবস্থিত চুলের মতো সূক্ষ কোষগুলো শক্ত হয়ে যায়। এর ফলে মস্তিষ্ক মেরুজলের প্রবাহ ব্যাহত হয়। হৃৎপিণ্ডের তৃতীয় অংশে এই মস্তিষ্ক মেরুজলকে ওপরে ঠেলার জন্য যে চাপের সৃষ্টি হয় তাই উচ্চ রক্তচাপ। অনেক সময় দুশ্চিন্তাজনিত কারণ থেকেও এটি হতে পারে। উচ্চ রক্তচাপের ফলে করোনারি হার্ট ডিজিজ, হার্টফেল, স্ট্রোক, কিডনি অকেজো ইত্যাদি মারাত্মক সমস্যা দেখা দেয়।
একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের রক্তের চাপ বা ব্লাড প্রেসার হবে ১২০/৭৫ মিলি মিটার । ইহা দু ভাগে ভিবক্ত ১- সিস্টেলিক ( মেশিনের উপরের উপরের লেভেল ) ৯০ + ৩০ =১২০ ( +/- ১০/১৫ কম বেশী হলে তেমন অসুবিধা নাই ২- মেশিনের নিচের লেভেল ( বা বয়সের কারণে এর কিছু বেতিক্রম হয় যা ( বয়স + ৯০ ) ঠিক তদ্রুপ ২- ডায়াস্টিলিকের বেলায় ৯০- ৩০=৬০ ( +-১০/১৫ ) এর উপরে হলেই মনে করতে হবে হাই ব্লাডপ্রেশার – অর্থাৎ ১২০/৭৫ নরমাল প্রেসার মনে করে , যে কোন মানুষের একবার প্রেশার মাপার পর পুনরায় ১/২ মিনিট অপেক্কা করে আবার প্রেসার চেক করে দেখবেন সামান্য কিছু পরিবর্তন আছে তাই তিন বার এক সাথে মাপা উচিৎ – ঠিক সেভাবে দিনে দুবার করে ৩/৫ দিন এক সপ্তাহ চেক করার পর ও যদি দেখেন আপনার বয়সের সাথে যোগ করে রক্তের চাপ একটু বেশী আছে তখন আপনার উচিৎ আপনার চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ নেওয়া
উচ্চ রক্তচাপ এর লক্ষণ
* মাথাব্যথা,
বিশেষ করে পেছনের দিকে ব্যথা। অনেক সময় সকালে ঘুম থেকে উঠার পর ব্যথা অনুভূত হয়। দু-চার ঘণ্টা পর কমে যায়
বিশেষ করে পেছনের দিকে ব্যথা। অনেক সময় সকালে ঘুম থেকে উঠার পর ব্যথা অনুভূত হয়। দু-চার ঘণ্টা পর কমে যায়
* মাথা ঘোরা
* বুক ধড়ফড় করা
* মনোযোগের অভাব
* অল্পতে হাঁপিয়ে যাওয়া
* মাংসপেশির দুর্বলতা
* পা ফোলা
* বুকে ব্যথা
* নাক দিয়ে রক্ত পড়া
* ক্লান্তিবোধ
* ঘাড় ব্যথা।
উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার কিছু কারণ
* ধূমপান
* ওজন বেশি
* অলস জীবন-যাপন
* খাবারের সঙ্গে বেশি লবণ গ্রহণ
* নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন
* বংশগত কারণে
* ক্রনিক কিডনি রোগ
* অ্যাড্রেনাল ও থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যা।
উচ্চ রক্তচাপ হলে যা খেলে উপকার হবে
* এক মাস সকাল ও সন্ধ্যায় দুই চামচ করে থানকুনি পাতার রস সেবন করুন। অথবা রসুন ১ কোয়া করে দুবেলা ভাতের সঙ্গে ১৫ দিন খান।
* ৪টি তুলসীপাতা ও ২টি নিমপাতা ১ চা চামচ পানিতে চটকিয়ে খেয়ে নিন।
* ১০০ গ্রাম পানিতে মাঝারি আকারের অর্ধেকটা লেবু চিপে দিনে ২-৩ বার পান করতে হবে।
উচ্চ রক্তচাপ হলে যা না খেলে নিজের উপকার হবেঃ
হাই ব্লাড প্রেসারে বেশি লবণ খেতে পারবেন না। কোলেস্টেরল সমৃদ্ধ খাবার যেমন ক্রিম, মাংস, ডিমের কুসুম, মাখন, ফ্রেঞ্জ ফ্রাইজ সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে চলতে হবে। প্রচুর পরিমাণ ফল ও সবজি খেতে হবে। সল্টেড বাটার, চিপস জাতীয় খাবার না খেলে নিয়ন্ত্রণে থাকে ব্লাড প্রেসার। ড্রিপ ফ্রায়েড খাবার, জাংক ফুড সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে চলতে হবে।
উচ্চ রক্তচাপ হলে যা করতে পারেন
* ওজন কামানো
* লবণ ও সোডিয়ামযুক্ত খাদ্য কম গ্রহণ
* হাঁটা, দৌড়ানো, সাঁতার কাটা ও শারীরিক পরিশ্রম করা
* রেড মিট বর্জন করা।
টিপস
উচ্চ রক্তচাপ হলে চোখ বন্ধ করে দুই হাতের কনিষ্ঠ আঙুল কানের মধ্যে দিয়ে ২-৩ মিনিট কান ঝাঁকুনি দিন।
নিম্ন রক্তচাপ বা লো ব্লাড প্রেসারঃ প্রেসার লো হলে বাড়িতেই প্রাথমিক কিছু পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
আমরা উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন নিয়ে সব সময় বেশী উদ্বিগ্ন থাকি। ছুটে যাই চিকিত্সকের কাছে। কিন্তু নিম্ন রক্তচাপ বা লো ব্লাড প্রেসার বা হাইপোটেনশন নিয়ে খুব একটা ভাবি না। যাদের লো ব্লাড প্রেসার তাদের একদিকে যেমন সুবিধা আছে অন্যদিকে অসুবিধাও কম নয়। উপকারিতার মধ্যে রয়েছে লো ব্লাড প্রেসারের রোগীদের স্ট্রোক, কিডনির সমস্যা, হূদরোগ সমস্যা হবার ঝুঁকি কম থাকে। তবে ব্লাড প্রেসার স্বাভাবিকের চেয়ে বেশী কমে গেলে মাথা ব্যথা, দুর্বলতা, এমনকি অজ্ঞান পর্যন্ত হবার ঘটনা ঘটতে পারে। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে শকে যায় রোগী, বিপদ হবার ঝুঁকি পর্যন্ত থাকে। একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের রক্তচাপ থাকে ১২০/৮০। অন্যদিকে রক্তচাপ যদি ৯০/৬০ বা এর আশেপাশে থাকে তাহলে তা লো ব্লাড প্রেসার হিসেবে ধরা হয়। প্রেসার যদি অতিরিক্ত নেমে যায় তাহলে মস্তিষ্ক, কিডনি ও হৃদপিন্ডে সঠিকভাবে রক্ত প্রবাহিত হতে পারে না, ফলে ব্যক্তি অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাই প্রেসার লো হলে বাড়িতেই প্রাথমিক কিছু পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
শুধু স্বাস্থ্যহীন হলেই যে লো প্রেসার হবে তাই নয়, মোটা মানুষেরও লো প্রেসার থাকতে পারে।
লো প্রেসার হওয়ার বিভিন্ন কারণ যেমনঃ অতিরিক্ত পরিশ্রম, দুশ্চিন্তা, ভয় ও স্নায়ুর দুর্বলতা থেকে লো ব্লাড প্রেসার হতে পারে।
লক্ষণঃ লো প্রেসার হলে কিছু লক্ষণ যেমনঃ প্রেসার লো হলে মাথা ঘোরানো, ক্লান্তি, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, বমি বমি ভাব, বুক ধড়ফড় করা, অবসাদ, দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসা ও স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে অসুবিধা দেখা দেয়।
কফি :- স্ট্রং কফি, হট চকলেট, কোলাসহ যেকোনো ক্যাফেইন সমৃদ্ধ পানীয় দ্রুত ব্লাড প্রেসার বাড়ায়। হঠাৎ করে লো প্রেসার দেখা দিলে এক কাপ কফি খেতে পারেন। যারা অনেকদিন ধরে এ সমস্যায় ভুগছেন তারা সকালে ভারি নাশতার পর এক কাপ স্ট্রং কফি খেতে পারেন। তবে সবসময় লো প্রেসার হলে কোলা না খাওয়াই ভালো। কারণ এর অন্যান্য ক্ষতিকারক দিকও রয়েছে।
লবণ পানি :- লবণে রয়েছে সোডিয়াম যা রক্তচাপ বাড়ায়। তবে পানিতে বেশি লবণ না দেওয়াই ভালো। সবচেয়ে ভালো হয়, এক গ্লাস পানিতে দুই চা চামচ চিনি ও এক-দুই চা চামচ লবণ মিশিয়ে খেলে। তবে যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে চিনি বর্জন করতে হবে।
কিসমিস :- হাইপোটেনশনের ওষুধ হিসেবে অতি প্রাচীনকাল থেকেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে কিছমিস। এক-দুই কাপ কিছমিছ সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। সকালে খালিপেটে সেগুলো খান। সঙ্গে কিছমিছ ভেজানো পানিও খেয়ে নিন। এছাড়াও পাঁচটি কাঠবাদাম ও ১৫ থেকে ২০টি চীনাবাদাম খেতে পারেন।
পুদিনা :- ভিটামিন সি, ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম ও প্যান্টোথেনিক উপাদান যা দ্রুত ব্লাড প্রেসার বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে মানসিক অবসাদও দূর করে। পুদিনা পাতা বেঁটে তাতে মধু মিশিয়ে পান করুন।
যষ্টিমধু :- যষ্টিমধু আদিকাল থেকেই নানা রোগের ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এক কাপ পানিতে এক টেবিল চামচ যষ্টিমধু দিয়ে পান করুন। এছাড়াও দুধে মধু দিয়ে খেলে উপকার পাবেন।
বিটের রস :- বিটের রস হাই প্রসার ও লো প্রেসার উভয়ের জন্যই সমান উপকারী। এটি রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। হাইপোটেনশনের রোগীরা দিনে দুই কাপ বিটের রস খেতে পারেন। এভাবে এক সপ্তাহ খেলে উপকার পাবেন।
লিংক সুত্রঃ
- http://infopedia.com.bd (হাই ব্লাড প্রেসার : কেন হয়, হলে কী করবেন বিস্তারিত পড়ুন)
- http://www.adhunikhomeopathy.com (ব্লাড প্রেসার লো হলে ঘরোয়াভাবে যা যা করতে পারেন !)