বেদানা, আনার বা ডালিম এক রকমের ফল ।
এর ইংরেজি নাম pomegranate। হিন্দি, উর্দু, ফার্সি ও পশতু ভাষায় একে আনার বলা হয়। কুর্দি ভাষায় 'হিনার' এবং আজারবাইজানি ভাষায় একে 'নার' বলা হয়। সংস্কৃত এবং নেপালি ভাষায় বলা হয় 'দারিম'। বেদানা গাছ গুল্ম জাতীয়, ৫-৮ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। পাকা ফল দেখতে লাল রঙের হয় । ফলের খোসার ভিতরে স্ফটিকের মত লাল রঙের দানা দানা থাকে । সেগুলি খাওয়া হয় ।
ডালিমের পুষ্টিমানঃ ডালিম কার্যকরী ভাবে ভিটামিন সি, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস ও জিংক দ্বারা সমৃদ্ধ। ডালিম একটি প্রায় চর্বিমুক্ত ফল। একটি মাঝারি আকৃতির ডালিমে প্রায় ১০০ ক্যালরি শক্তি রয়েছে। এছাড়াও ডালিম ভিটামিন বি কমপ্লেক্স যেমন থায়ামিন, রাইবোফ্লাবিন, নিয়াসিন এবং আয়রনের অন্যান্য উপাদানের উৎস।
মানবদেহে ডালিমের কার্যকারীতাঃ ডালিমে রয়েছে ভাইরাস প্রতিরোধ ক্ষমতা। ডালিম খেলে সাধারণ সর্দি-কাশি সেরে যায়। সম্প্রতি ইংল্যান্ডে ডালিমের রস থেকে ন্যাজাল স্প্রে তৈরির গবেষণা চলছে। ঔষধ হিসেবে ব্যাবহার করার জন্য রাশিয়ায় বুনো ডালিমের রস সাইট্রিক এসিড ও সোডিয়াম সাইট্রেট তৈরির কাজে ব্যাবহৃত হয়। ডালিম বদহজম দূর করে। ডালিম খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। রাসুল (সাঃ) বলেছেন- “তোমরা ডালিম খাও এতে কোষ্ঠ পরিষ্কার হবে”। এছাড়া ডালিম মৃদু জোলাপেরও কাজ করে। ডালিমের খোসা ডায়রিয়া ও ডিসেনট্রি প্রতিহত করে। ডালিমের বিচি থেকে তৈরি তেলে রয়েছে ব্যাকটেরিয়া প্রতিহিত করার উপাদান। ডালিম দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ফিতাক্রিমি সংক্রমন প্রতিরোধে ডালিমের শুকনা মূলের ছাল এবং কাণ্ড চিকিৎসার কাজে ব্যাবহৃত হয়। এছাড়াও ডালিম ত্বকের উজ্জলতা বৃদ্ধি করে
কী কী প্রধান উপকারিতা রয়েছে এই ফলটির।
হৃদরোগের ঝুঁকি কমাবে-
এক গ্লাস আনারের জুসে রয়েছে যথেষ্ট পরিমান এন্টিওক্সিডেন্ট ও পলিফোনালস। এমনকি গ্রীন টি থেকেও বেশী। যা শরীরে কোলেস্টরলের পরিমান কমিয়ে হার্টকে রাখে ঝুঁকিমুক্ত। তাই প্রতিদিন এক গ্লাস আনারের জুস কমিয়ে দিচ্ছে আপনার হৃদরোগের ঝুঁকি।
ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা-
বিভিন্ন গবেষনায় দেখা গেছে আনারের এন্টিওক্সিডেন্ট ও পলিফোনালস ক্যান্সার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে। এগুলো ক্যান্সার সেল তৈরী ও বেড়ে ওঠাকে প্রতিরোধ করে। এমনকি ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর জন্যও গুরুতপূর্ণ ভুমিকা পালন করে।
হজমে সহায়তা করে–
আনার খুবই সাহায্যকারী এ হজমের জন্য। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পরিশোষক যা হজমের জন্য সহায়ক।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি–
আনারে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি যা শরীরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। নিয়মিত আনার খেলে শরীর থাকবে সুস্থ ও সতেজ।
কামশক্তি বৃদ্ধি করা –
এক গবেষনায় বলা হয়েছে প্রতিদিন এক গ্লাস আনারের জুস সাহায্য করে প্রয়োজনীয় হরমোন বৃদ্ধিতে, নারী ও পুরুষ উভয়ের যৌন ক্ষমতার জন্যই।
তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে –
তারুন্য ধরে রাখতে কে না চায়? তবুও আমাদের কোষগুলো ড্যামেজড হয়ে প্রতিদিনই বাড়িয়ে দিচ্ছে বয়সের ছাপ চেহারায়। দেখা গেছে আনারের ভেতর উপস্থিত এন্টিওক্সিডেন্ট এ পদ্ধতিকে কিছুটা দুর্বল করে দেয়। তাই দীর্ঘদিন আপনি ধরে রাখতে পারবেন আপনার তারুন্য।
কুইন মারগারেট বিশবিদ্যালয়ের এক গবেষনায় বলা হয়েছে প্রতিদিন যারা আনারের জুস খেয়ে থাকে তাদের স্ট্রেস লেভেল কমে যায়। এ সকল মানুষের স্ট্রেস কম থাকে অন্যদের থেকে গবেষনায় দেখা গিয়েছে।
এত সব উপকারিতা রয়েছে এ একটি ফলের ভিতরই ! তার উপর এ গরমে আনারের জুস মেটাবে আপনার তৃষ্ণাও। তাই প্রতিদিন কমক্ষে এক গ্লাস আনারের জুস খেতে ভুলে যাবেন না কিন্তু।
নেট থেকে সংগৃহীত